🖋ডেস্ক রিপোর্ট | বঙ্গ মিরর :
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার ভ্যাকসিন কিনতে ভারতকে অগ্রিম হিসাবে ৬০০ কোটি টাকাও বেশি দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিনিময়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট দেবে ব্যাংক গ্যারান্টি। রবিবার (০৩ জানুয়ারি) সেরাম ইনস্টিটিউটের ব্যাংক হিসাবে এ টাকা জমা দেয়া হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে।
ভারতের বৃহৎ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউট অগ্রিম হিসেবে এ টাকা নেবে। ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করার পর বাকি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
গতকাল শনিবার (০২ জানুয়ারি) অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে ভারতের সরকার। এর আগে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে অক্সফোর্ড-অ্যাষ্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন কিনতে চুক্তি করে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘যেকোনও টিকার দুটি দিক রয়েছে। একটা হল- টিকা দেশে আনা এবং দ্বিতীয়টি হল ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া। এক্ষেত্রে আইনি অনেক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে জটিলতা এড়াতে সরাসরি ক্রয়ের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ভ্যাকসিন আনতে পারবো। টিকা দেয়ার জন্য সারা দেশে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী এবং সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক কাজ করবেন।’
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারত থেকে ক্রয়কৃত টিকা কিভাবে দেশে আনা হবে এ নিয়ে তারা পরিকল্পনা করে রেখেছে। ভ্যাকসিনের ডোজগুলো প্রথমে টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করা হবে। পরে সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন কোল্ডস্টোরেজে স্ব স্ব ব্যবস্থাপনায় পৌঁছে দেয়া হবে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিনগুলো বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে নেয়া হবে।
এদিকে গতকাল শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যেই করোনা ভাইরাসের টিকা দেশে আসবে। এ সপ্তাহেই সেরাম ইনস্টিটিউটকে অক্সফোর্ডের এ টিকার টাকা পরিশোধ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি মাসেই কোনও একসময়ে আমরা টিকা পেয়ে যাবো। আমাদের তো পেপার ফরমালিটি যা ছিল সেটা প্রায় কমপ্লিট হয়ে গেছে। অ্যাডভান্সের টাকাও চলে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের ১০ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার প্রাথমিক লক্ষ্য সরকারের। এক্ষেত্রে একটি টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে কখন কারা কীভাবে টিকা পাবে সেই তালিকা তৈরির কাজ চলছে।’
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, ষাটোর্ধ্ব বয়সীরা আগে টিকা পাবেন। প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। আমরা ৫০ লাখ জনগণের টিকা পাবো। প্রথম ৫০ লাখ টিকা ২ ডোজ করে ২৫ লাখ মানুষকে দেয়া হবে। ৬ মাসে ৩ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।’
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টিকাদানের কারণে দরিদ্র ও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর টিকা প্রাপ্তি থেকে বাদ পড়ার কোনও শঙ্কা নেই জানিয়ে ডা. সেব্রিনা বলেন, ‘টিকা দেয়ার আগে নিবন্ধনের জন্য সারা দেশে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। নিবন্ধন ছাড়া কাউকে টিকা দেয়া হবে না। নিরক্ষর মানুষদের জন্যও নিবন্ধনের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। গ্রাম পর্যায়েও এখন ডিজিটাল সেবা পৌঁছে গেছে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ আমাদের সহযোগিতা করতে পারবে।’
বেসরকারি পর্যায়ে টিকা আমদানি করা যাবে কিনা- এমন প্রশ্নে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোনও বাধা বা নির্দেশনা নেই। কোনও কোম্পানি যদি টিকা আনতে চায়, আমাদের অবশ্যই কিছু শর্ত থাকবে। টিকার ফলাফল, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সক্ষমতা, মূল্য- এসব বিষয়গুলোর তথ্য আমাদের জানাতে হবে।’
বেসরকারি খাতও টিকা আনতে আগ্রহী জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘সরকার বিষয়টি বিবেচনা করছে।’
এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটিসহ আরও দুটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে ফাইজার ও অক্সফোর্ডেল ভ্যাকনিস অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি মডার্নাও আরেকটি ভ্যাকনিস তৈরি করেছে। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটিই সবচেয়ে বেশি সংরক্ষণ উপযোগী।
করোনা ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তির ধারা অনুযায়ী, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ৬ মাসে বাংলাদেশকে ৩ কোটি টিকা দেবে। প্রতিমাসে টিকা আসবে ৫০ লাখ করে। সেরাম ইন্সটিটিউট আগামী জুনের মধ্যে ভ্যাকসিন দিতে না পারলে বাংলাদেশ এই অগ্রিম টাকা ফেরত নেবে।
বঙ্গ মিরর/এসআর