🖋ডেস্ক রিপোর্ট | বঙ্গ মিরর :
বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তির নাম জিজ্ঞেস করলে অনেকেই আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স কিংবা রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্টের নাম বলতে চাইবেন কেউবা আবার মেসি রোনালদো, সাকিবদের মতো বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড়দের কথাও বলবেন তবে বাস্তবতা হচ্ছে এই যে সাধারণ জন মানুষের একটা বড় অংশই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ানের নাম বলবেন।
সাম্প্রতিক সময়ে আর্মেনিয়া-আলজেরিয়া যুদ্ধ, বায়রাক্তার ড্রোন তৈরী, কোরাল জ্যামার উদ্ভাবন, বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা, রাশিয়ার কথা কানে না তোলা, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে নিয়ে বিতর্কিত কার্টুন তৈরির প্রতিবাদে ফ্রান্সের পণ্য বয়কট থেকে শুরু করে একই ইস্যুতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে তুলোধুনোসহ নানাভাবে বিশ্ব রাজনীতিতে বেশ ভালোই উত্তাপ ছড়াচ্ছেন এই তুর্কী নেতা।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলিম বিশ্বে তার যেমন আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা ঠিক তেমনি ভাবে মুদ্রার অপর পিঠ দেখলে পশ্চিমা বিশ্বসহ বিরোধী দেশগুলোতে তিনি সমানভাবে সমালোচিত। তারা তাকে নিয়ে বিশদগার করতও পিছপা হয় না।
এরদোয়ানের জন্মঃ
উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, এরদোয়ানের জন্ম ২৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৪ সালে। তার বাবা ছিলেন একজন উপকূল-রক্ষী। বাবার পেশার সুবাদে তুরস্কের কৃষ্ণ সাগর সমুদ্র উপকূলে তার বেড়ে ওঠা।
এরদোয়ানের কৈশোর ও শিক্ষাজীবনঃ
তার প্রথম জীবন কিংবা শুরু যাই বলি না কেনো, সেটা ছিল আর দশজন কিশোরের মতোই সাধারণ। এ সাধারণ অবস্থা থেকেই উঠে এসে তিনি অসাধারণদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন।
কিশোর বয়সে এরদোয়ান বাড়তি আয়ের জন্য কখনো লেবুর শরবত আবার কখনোবা রাস্তায় রুটি বিক্রি করতেন। এরদোয়ানের বয়স যখন ১৩ তখন উন্নত জীবন আর সন্তানদের পড়ালেখার জন্য এরদোয়ানের বাবা পরিবার ইস্তানবুলে চলে আসেন। এরদোয়ান পড়াশোনা করেছেন ইসলামিক স্কুলে। এরপর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন ইস্তানবুলের মারমারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
এরদোয়ানের রাজনৈতিক জীবনঃ
ইস্তানবুল থেকে এরদোগানের রাজনৈতিক জীবনের শুরু। ১৯৯০ সাল থেকে বেশ কয়েকবার মেয়র হয়েছিলেন তিনি। ২০০১ সালে তিনি একে পার্টি (জাস্টস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা একেপি) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যেই দলটি জনসমর্থনের মাধ্যমে এক নম্বর অবস্থানে চলে আসে।
২০০৩ সালে এরদোয়ান জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। টানা ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পরে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে জনগণের ভোটের মাধ্যমে ফ্রান্সের ১২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
সুলতান উপাধিঃ
তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। এরকারনেই তার সমর্থকেরা তাকে অটোমান সম্রাটদের মতো ‘সুলতান’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।
এরদোয়ানের নেয়া পদক্ষেপ সমূহ ও এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াঃ
হিজাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াঃ
গত কয়েক দশক ধরে তুরস্কের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অফিস সমূহতে নারীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ ছিল। তবে ২০১৩ সালে হিজাবের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন এরদোয়ান। যদিও সামরিক বাহিনী, পুলিশ এবং বিচার বিভাগ এ আইনের আওতায় ছিল না।
ব্যভিচার বন্ধ অ্যালকোহলমুক্ত এলাকা চালুঃ
ব্যভিচারকে এরদোয়ান ফৌজদারি অপরাধ অবহিত করে আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে তার সে উদ্যোগ সফল হয়নি। এদিকে অ্যালকোহলমুক্ত এলাকা চালু করলেও সে যাত্রায়ও আলোর মুখ দেখতে ব্যর্থ হন তিনি।
তুরস্কের অর্থনৈতিক অগ্রগতিঃ
এরদোয়ানের শাসন ব্যবস্থায় তুরস্কে বিরাট অর্থিক উন্নয়ন ঘটে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বৃদ্ধি পায়। সবদিক মিলিয়ে তুরস্ক বেশ শক্ত অবস্থানে আছে বলা চলে।
তুরস্ক আজারবাইজান সম্পর্ক ও রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধঃ
আজারবাইজান বিভিন্ন ভাবে তুরস্কের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা নিজেদেরকে একজাতি দুই দেশ বলে থাকে। অপরদিকে বিপুল তেল সম্পদে পূর্ণ আজারবাইজানকে তেল রফতানির জন্য তুরস্কের ওপর নির্ভর করতে হয়। আজারি তেলের পাইপের লাইন তুরস্কের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে বিগত কয়েকশত বছর ধরে এই ককেশাস অঞ্চলে রাশিয়া তার ক্ষমতার জাল বিছিয়ে আসছে তবে এ অঞ্চলে এরদোয়ানের প্রভাব বিস্তার নীতির কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গেও তার বিরোধ বৃহৎ আকার ধারণ করেছে।
আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরঃ
দেড় হাজার বছর আগে নির্মিত ইস্তানবুলের ঐতিহাসিক গির্জা। যেটি আয়া সোফিয়া ভবন নামে পরিচিত। সেটিকে এ বছরের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মসজিদে হিসেবে চালু করেন।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরে এরদোয়ানঃ
সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় পাওয়া গেছে বিশাল গ্যাস ভাণ্ডারের খোঁজ। নিজেদের সমুদ্র উপকূল তুরস্কের গ্যাসের অনুসন্ধানের ফলে সাইপ্রাস ও গ্রিস উভয় দেশের সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও এরদোয়ানকে সতর্ক করেছে।
উত্তর সাইপ্রাসে তুরস্ক সমর্থিত সরকারঃ
তুর্কি জাতীয়তাবাদী নেতারা উত্তর সাইপ্রাসে সরকার গঠন করেছে। স্বঘোষিত এ সরকারকে একমাত্র তুরস্কের এরদোয়ান সরকারই স্বীকৃতি দেয়।
মুসলমান ব্রাদারহুডের সাথে এরদোয়ানের সম্পর্কঃ
বলা হয়ে থাকে মিসরের নিষিদ্ধ-ঘোষিত রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে এরদোয়ানের আদর্শিক মিল রয়েছে।
ফ্রান্সকে বয়কটঃ
সর্বশেষ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার দেশে ইসলামপন্থীদের দমন ও নবী (স.) কে ব্যঙ্গ করে কার্টুন প্রকাশ এবং ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে। এর প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ম্যাক্রোঁকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বলেছেন। সেই সাথে ফরাসি পণ্য বয়কটেরও ডাক দেন তিনি।
ইস্তাম্বুলের মেয়র থেকে আজকের তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমায় এরদোয়ান প্রভাবশালী বিশ্ব নেতাদের মধ্যে অন্যতম। আগামীতে তার অবস্থান কি হবে সেটা হয়তো সময়ই বলে দেবে।
বঙ্গ মিরর/এমএমআর