🖋ডেস্ক রিপোর্ট | বঙ্গ মিরর :
পুরুষের লিঙ্গ কর্তন বা অন্য কোনও উপায়ে পুরুষত্বহীন করা হলে অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়ার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন।
মানববন্ধনে বক্তারা লিঙ্গ কর্তনকে ধর্ষণ সমতুল্য কিংবা ধর্ষণের চেয়েও গুরত্বপূর্ণ অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানান। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, ধর্ষণের শিকার একজন নারী পুনরায় বিয়ে করতে পারেন, সন্তান জন্ম দিতে পারে, যৌন জীবনে সক্রিয় থাকতে পারেন। যা লিঙ্গ কর্তনের শিকার পুরুষ পারেন না।
মঙ্গলবার (০৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুরুষের প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধ করার দাবিতে এ মানববন্ধন হয়।
সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, পুরুষের প্রতি যৌন সহিংসতা হিসেবে লিঙ্গ কর্তনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। কখনও স্ত্রীর দ্বারা বা কখনও অন্য দুর্বৃত্তদের দ্বারা পুরুষাঙ্গ কর্তনের মত নৃশংস অপরাধের শিকার হচ্ছে পুরুষ। এ অপরাধের ফলে যৌন জীবন ও পিতৃত্বের ক্ষমতা আজীবনের মত হারিয়ে ফেলছে পুরুষ।
অনেক সময় এই গুরুতর জখমের ফলে মৃত্যুবরণও করছে। অথচ অপরাধের মাত্রা ও ভিক্টিম পুরুষের ক্ষতির তুলনায় লিঙ্গ-কর্তনের অপরাধীদের অনেক লঘু শাস্তি হচ্ছে। আমরা লিঙ্গ কর্তনের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধানের দাবি জানাচ্ছি- বলেন তিনি।
এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, পুরুষের লিঙ্গ কর্তনকে ধর্ষণতুল্য অপরাধ বা ধর্ষণের চেয়েও গুরুতর অপরাধ ও যৌন সহিংসতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। লিঙ্গ-কর্তনের শিকার একজন পুরুষ জীবনে আর বিয়ে করতে পারেন না, যৌন জীবনে সক্রিয় থাকতে পারেন না, সন্তান জন্ম দিতে পারেন না। মৃত্যুঝুঁকি এড়িয়ে বেঁচে গেলেও লিঙ্গ কর্তনের শিকার পুরুষকে আজীবন অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়, যা খুবই অমানবিক।
তিনি বলেন, ধর্ষণের চেয়ে লিঙ্গ কর্তন ও পুরুষত্বহানি কোনও অংশেই কম গুরুতর অপরাধ নয়। তাই ধর্ষণের শাস্তি যেমন মৃত্যুদণ্ড, তেমনই পুরুষাঙ্গ কর্তনের শাস্তি হিসেবেও মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকা আবশ্যক।
সংগঠনের আইন উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাওসার হোসাইন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান দন্ণ্ডবিধি-১৮৬০ এর ১৬ নং অধ্যায়ে মানবদেহ সংক্রান্ত অপরাধ বিষয়ে উল্লেখ করা আছে। সেই অধ্যায়ে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা নামে সুনির্দিষ্ট কোনও অপরাধ আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা নেই। তবে উক্ত অধ্যায়ের ৩২০ ধারায় গুরুতর আঘাতের সংজ্ঞা দেয়া আছে, যার মধ্যে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা অপরাধটি অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
তিনি বলেন, ৩২০ ধারায় উল্লেখিত গুরুতর আঘাতের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যে, ৮ শ্রেণির আঘাতকে গুরুতর আঘাত হিসেবে গণ্য হবে। তার মধ্যে ১, ৪ ও ৫ নং শ্রেণির আঘাতের সবগুলো বা যেকোনও একটি শ্রেণির আঘাত পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
তিনি যোগ করেন, বিধায় দন্ডবিধির ৩২০ ধারার সংজ্ঞা অনুযায়ী পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার অপরাধ একটি মারাত্মক আঘাতের অপরাধ। মারাত্মক এই আঘাতের শাস্তি ৩২৫ ও ৩২৬ ধারায় দেয়া আছে। ৩২৫ ধারা প্রযোজ্য হবে যদি মারাত্মক আঘাতের জন্য কোন অন্ত্র ব্যবহার না করা হয়, বা সাধারন (ভোতা) অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, উক্ত ধারা অনুযায়ী অপরাধীর শান্তি ৭ বৎসর কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
অন্যদিকে ৩২৬ ধারা প্রযোজ্য হবে, যদি মারাত্মক আঘাত সংঘটনের জন্য মারাত্ম বা বিপদজনক অস্ত্র বা মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা যেকোনও বর্ণনার কারাদণ্ড যা ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং জরিমানা হতে পারে- বলেন তিনি।
উক্ত বিশ্লেষণ থেকে এটি স্পষ্ট যে মারাত্মক অন্ত্র বা মাধ্যম বাযবহার করে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার মতো অপরাধ করা হলে তার শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যমান শাস্তি বলবৎ থাকার পরেও এই অপরাধটি সংঘটিত হওয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং এটি একটি নিষ্ঠুরতম অমানবিক অপরাধ, যা একজন পুরুষকে জীবিত অবস্থায় মৃতের মত করে বাঁচিয়ে রেখে অসহনীয় মানসিক হতাশা ও যন্ত্রণা দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
৩২০ ধারার ৮ শ্রেণির আঘাত হলো-১) পুরুষত্বহীন করা, ২) স্থায়ীভাবে দুই চোখের যেকোনটিতে দৃষ্টিশক্তি রহিতকরণ, ৩) স্থায়ীভাবে দুই কানের যেকোনটিতে শ্রবণশক্তি রহিতকরণ, ৪) যেকোন অঙ্গ বা প্রন্থির অনিষ্ঠ সাধন, ৫) যেকোনও অঙ্গ বা গ্রন্থির কর্মশক্তিসমূহের বিনাশ বা স্থায়ী ক্ষতি সাধন, ৬) মন্তক বা মুখমণ্ডলের স্থায়ী বিকৃতি, ৭) হাড় বা দন্ত ভঙ্গ বা গ্রন্থিচ্যুতিকরণ, ৮) যে আঘাত জীবন বিপন্ন করে বা আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ২০ দিন মেয়াদের জন্য তীব্র দৈহিক যন্ত্রণা দান করে বা তাকে তার সাধারণ পেশা অনুসরন করতে অসমর্থ করে।
মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক খানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আইন উপদেষ্টা সপ্রিম কোর্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাওসার হোসাইন, এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম, আলমগীর আহমেদ ও তাহমিনুর রহমান সজীবসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা।
বঙ্গ মিরর/এসআর